ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী টানা তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে এইবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে মোদির বিজেপি।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরুর পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিংয়ে উঠে আসে একটি নাম ‘ধ্রুব রাঠি’। ফেসবুক, এক্সে ছড়িয়ে পড়েছে তার বিবৃতি ‘নেভার আন্ডারএস্টিমেট দ্য পাওয়ার অব অ্য কমন ম্যান।’ বলা হচ্ছে, ‘বিজেপি সাম্রাজ্যের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছেন’ এই ওয়ান-ম্যান আর্মি।
তবে ধ্রুব রাঠি কোনো রাজনীতিবিদ কিংবা সাংবাদিক নন। তিনি একজন ইউটিউবার। গত কয়েক মাসে নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপির কঠোর সমালোচনা করে একের পর এক ভিডিও তৈরি করেছেন তিনি।
তার ভিডিও এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে আলজাজিরা, ফ্রান্স ২৪, দ্য ইকনোমিস্ট, টাইম ম্যাগাজিন, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য প্রিন্ট, দ্য ইকনোমিক টাইমসের মতো আন্তর্জাতিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছেন তিনি।
টেলিগ্রাফ তাকে সম্মোধন করেছে ‘দ্য ট্রুথ টেলার’ হিসেবে, ফ্রান্স ২৪ তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম দিয়েছে ‘ইউটিউব সেনসেশন ধ্রুব রাঠি, সরকারকে দায়বদ্ধ করে চলেছেন’, ইকোনোমিক টাইমস শিরোনাম দিয়েছে ‘নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের ইউটিউবার’। অন্যদিকে, টাইম ম্যাগাজিনের নেক্সট জেনারেশন লিডারস তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ধ্রুব রাঠি।
এমনকি গতকাল লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরুর পর ভারতের সংবাদমাধ্যমও তাকে নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে।
ইউটিউবে শক্তিশালী উপস্থিতি নিয়ে আসেন ধ্রুব রাঠি। ইউটিউবে তার ২১.৫ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, যা বিজেপির ইউটিউব চ্যানেলের প্রায় ৪ গুণ। নরেন্দ্র মোদির ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার রয়েছে ২৩ মিলিয়ন ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাবস্ক্রাইবার রয়েছে ৬ মিলিয়ন।
২৯ বছর বয়সী ধ্রুব রাঠি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একসময় নরেন্দ্র মোদির ভক্ত ছিলেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি সবেমাত্র হাইস্কুল শেষ করে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নিতে জার্মানিতে চলে যান।
এই সময় তিনি তার ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন। রাঠির প্রথম ভিডিওটি ছিল তার আইফোন ৫এস এ তৈরি একটি ট্রাভেল ভ্লগ। এটি তিনি দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সম্পাদনা করেছেন।
২০১১ সালে ভারতের লাখো তরুণের মতো সে প্রজন্মের প্রথম প্রধান দেশব্যাপী আন্দোলনের প্রতি রাজনৈতিকভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন ধ্রুব। সেটি ছিল কংগ্রেস পার্টির তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ। এ আন্দোলনই নরেন্দ্র মোদির জাতীয় উত্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল।
২০১৪ সালে রাজনীতিতে মোদির উত্থানে দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আশা দেখেছিলেন ধ্রুব। তিনি মোদিকে সমর্থক জানিয়েছিলেন এবং তার ক্ষমতায় যাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
কিন্তু শিগগিরই কয়েকটি ঘটনায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন ধ্রুব।
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি (এএপি) জাতীয়ভাবে বিরোধী দলে থাকলেও দিল্লিতে ক্ষমতায় ছিল। তারা একটি দুর্নীতিবিরোধী হেল্পলাইন চালু করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রের মোদি সরকার ওই হেল্পলাইনের নিয়ন্ত্রণের জন্য এএপি রাজ্য সরকারের সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু করে।
‘এটি আমার জন্য খুব মর্মান্তিক মুহূর্ত ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি ভারত থেকে দুর্নীতি অপসারণ করতে আগ্রহী নন,’ ধ্রুব বলেন।
মূলধারার টিভি চ্যানেল মোদি ও বিজেপির পক্ষে এক নাগাড়ে সমর্থন প্রদর্শনের পর তার হতাশা আরও বেড়ে যায়।
সেই পটভূমিতে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ইউটিউবে তার প্রথম রাজনৈতিক মন্তব্য আপলোড করেছিলেন ধ্রুব। ভিডিওটি সম্পূর্ণরূপে তার ফোনে শ্যুট করা হয়েছিল।
এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। গত আট বছরে, তিনি তার প্রধান ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৬৫০টি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তার কিছু ভিডিও ইতিহাস নিয়ে, যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কী ঘটেছিল বা ভারতের জনগণের মধ্যে বিশাল অংশের ওপর তাপদাহের ঝুঁকি নিয়ে। তবে তার অধিকাংশ ভিডিওর কেন্দ্রে থাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সরকারের সমালোচনা।