গত পরশু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়ার স্যাম নোগাস্কি ও আরেক জন ইংল্যান্ডের রিচার্ড ইলিংওর্থ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সরব অবস্থান তৈরি হয়েছে। শুধু ভক্তরা নয়, বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে এসেছে সেসব কথা। ক্রিকেটার তাওহীদ হৃদয়ও সংবাদ সম্মেলনে আম্পায়ারিং নিয়ে কথা বলেছেন। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে বিষয়টি এখন টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
এমসিসির ডেড বলের নিয়মে ২০.১.১.৩ ধারায় বলা হয়েছে, আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বল ডেড হয়ে যাবে। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বল সীমানা ছাড়া হলেও সেটি থেকে কোনো রান যোগ হবে। এই নিয়মের কারণে কোনো আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বলের গতিপথ দেখে নেন। কিংবা কিছুটা সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু নোগাস্কি সেটি করেননি। এই ঘটনার পরে এমসিসির এমন নিয়ম পরিবর্তনের কথা বলেছেন অনেকে। বাংলাদেশি তারকা ওপেনার তামিম ইকবালের মতে এমনটি হতে পারে না। তার মতে ঐ ৪ রান যুক্ত হলে দলের ভাগ্য বদলে যেত।
গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে দায়িত্ব পালন করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ইংলিশ আম্পায়ার ইলিংওর্থ। আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের স্বীকৃতি ডেভিড শেফার্ড ট্রফিও জিতেছেন তিনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ ম্যাচের পরে তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বেশি রোষানলে পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার নোগাস্কি। ১১৪ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের যখন ২৩ বলে ২৬ রান দরকার, সেই মুহূর্তে পেসার ওটনিল বার্টম্যানের বল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পায়ে লেগে সীমানা ছাড়া হয়। কিন্তু তার আগে প্রোটিয়াদের আবেদনে সাড়া দিয়ে এলবিডব্লিউয়ের জন্য আঙ্গুল তুলে দেন নোগাস্কি। রিয়াদ রিভিউ নিয়ে জীবন ফিরে পেলেও ৪টি রান আর যোগ হয়নি স্কোরবোর্ডে।
ম্যাচ শেষে ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকারও একই বিষয়ে কথা বলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার মরনে মরকেলও নিয়ম বদলানোর বিষয়ে মত দিয়েছেন। ভারতের এক সময়ের প্রতাপশালী ক্রিকেটার ওয়াসিম জাফর জানিয়েছেন, ‘মাহমুদউল্লাহকে ভুলভাবে এলবিডব্লিউ দেওয়া হয়েছে। লেগ বাইয়ের মাধ্যমে বলটি থেকে ৪টি রান হয়েছিল। আম্পায়ারকে রিভিউয়ের কারণে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। কিন্তু তার আউট দেওয়ার কারণে ৪ রান পায়নি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার সেই ৪ রানেই জয় পেয়েছে। বাংলাদেশের দর্শকদের দুঃখ বুঝতে পারছি।’ আরেক ভারতীয় ক্রিকেটার আম্বাতি রাইডু তো আরেক কাঠি সরস মন্তব্য করেছেন। তিনি এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘১৫০ বছরের ক্রিকেটে আপনি আম্পায়ারকে এমন আউট দিতে দেখবেন না। এটি একটি ভয়ানক সিদ্ধান্ত ছিল। লেগ স্ট্যাম্পের একটি অংশ দেখা যাচ্ছিল, তার মানে এই নয় যে, ব্যাটারটি আউট। বলটি যেখান থেকে ছাড়া হয়েছে তার অবস্থানও আপনাকে দেখতে হবে।’
শুধু রিয়াদের আউট নয়, তাওহীদ হৃদয়ের আউট নিয়েও কথা হচ্ছে। রিয়াদের ভুল এলবিডব্লিউ দেওয়ার পরের ওভারেই হৃদয়কে এলবিডব্লিউ দেন ইলিংওর্থ। সে সময়ে ৩৩ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। উইকেটে থিতু হওয়া একজন ব্যাটার হিসেবে হয়তো তিনি ম্যাচটা বের করে নিয়ে আসতে পারতেন। ১৮ বল থেকে ২০ রান হয়তো তার কাছে ব্যাপার ছিল না। কিন্তু ১৮তম ওভারে কাগিসো রাবাদার করা প্রথম বলটিতে ইলিংওর্থের ঐ সিদ্ধান্তে হৃদয় ভেঙেছে কোটি কোটি ভক্তের। রিয়াদ রিভিউ নিয়ে বাঁচলেও হৃদয় বাঁচতে পারেননি। লেগ স্টাম্পের ওপর দিয়ে বলটি বের হয়ে যাওয়ার সময়ে স্টাম্পে হালকা ছুঁয়ে গেছে। তাতেই আম্পায়ারর্স কল হিসেবে বিবেচনা করে আউট দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা বলেছেন, ‘এমন আউট না দিলেও হতো। লেগ সাইড দিয়ে বল চলে যাচ্ছিল।’ বাংলাদেশ থেকে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দ. আফ্রিকা সে সময়ে ব্যাটিংয়ে থাকলে হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিতেন না ইলিংওর্থ। এমসিসির ২.৬ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি ম্যাচে আম্পায়াররা ন্যায্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আবার ২.১২ ধারায় বলা হয়েছে, আম্পায়ার চাইলে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবেন। তাছাড়া একজন আম্পায়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটিই চূড়ান্ত। তাতে ঐ সময়ে আর কিছুই বলার সুযোগ ছিল না। হৃদয় জেতা ক্রিকেটার হৃদয় ভয়ডরহীনভাবে কথা বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে, সেটি নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তার কথায় ক্রিকেট মোড়লদের ব্যথা লাগলেও লাগতে পারে। তাতে কোনো অশনি বার্তাও শোনা যেতে পারে! তবে ভক্তরা চান সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠুক, মাঠের উত্তেজনা আরও বাড়ুক।