বাংলাদেশে সরকারি হিসাবেই সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার ৭ লাখের বেশি। ‘মুক্তপেশা’ হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বেছে নেওয়া তরুণ-তরুণীর এ সংখ্যা বাড়ছেই। সরকার সবসময় তাদের কাজের ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলে আসলেও তা যেন আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ। নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা না পাওয়াটাই বর্তমানে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে বড় বাধা।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে মাসে অন্তত ৭ বার ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। তবে চলতি জুলাই মাস যেন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এক দুঃসহ সময়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১০ জুলাই থেকে ইন্টারনেটে ধীরগতির শুরু। ১৫ জুলাই থেকে ধীরগতি আরও খারাপের দিকে যায়। ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে হঠাৎ সারাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন হয়ে যায়। এতে যেন মাথায় বাজ পড়ে ফ্রিল্যান্সারদের।
ফ্রিল্যান্সারদের ছোট-বড় বেশ কয়েকটি সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে সংগঠিত বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে যে তথ্য পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৬১ জন বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার নেপালে গেছেন। এছাড়া ভারতে গেছেন ৩৩ জন। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করেন তারা। তাছাড়া দেশে ইন্টারনেটে এখনো ধীরগতি থাকায় আরও অনেকেই যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইন্টারনেট চালুর পর গতি কম থাকায় গত ২৩ জুলাই নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন ফ্রিল্যান্সার আতিকুর রহমান। টানা সাতদিন তিনি দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুর ‘চন্দ্রগিরি হিলস’ হোটেল অবস্থান করছেন। হোটেলের ইন্টারনেট ও সেদেশের মোবাইল সিম দিয়ে ফোরজি ডাটা ব্যবহার করে নিজের প্রতিষ্ঠানের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সাধ্যমতো কাজ করছেন। তবে সেখানে থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে বড় অংকের টাকা।
নিজের ফেসবুক পেজে দুঃখ প্রকাশ করে সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে একটি পোস্ট দেন আতিকুর রহমান। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘৬ দিন হয়ে গেলো একাকী প্রবাস জীবনযাপন করছি। ঘুরতে আসলে ভিন্নকথা। তবে ছোট্ট একটা আইটি ফার্মকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অন্য একটি দেশে এসে থাকা নিষ্ঠুর এবং বিরক্তিকর। এখনো দেশে নেটের স্পিড স্বাভাবিক হলো না!’ পোস্টের সঙ্গে হোটেলে বসে কাজ করার একটি ছবিও শেয়ার করেছেন তিনি।
‘স্প্রিংডেভস’ও ‘বিট বাইট টেকনোলজি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আল-মাহমুদ। তিনি জানান, ইন্টারনেট শাটডাউন হওয়ার পর তার টিমের বেশ কয়েজনকে নেপালে পাঠিয়েছেন। সেখানে থেকে এখনো তারা কাজ করছেন। এজন্য প্রতিদিন বড় অংকের অর্থ খরচ করতে হচ্ছে তাদের। আয়ের চেয়ে এখন প্রতিদিন বেশি খরচ পড়ছে। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে তিনি এ পথে হেঁটেছেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘যতদিন ইন্টারনেটে ধীরগতি থাকবে, ক্ষতি তত বাড়বে। দৃশ্যমান বা সাময়িক ক্ষতির চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বেশি। বিদেশি ক্লায়েন্টরা সময়মতো কাজ না পেয়ে নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে গেলে একজন ফ্রিল্যান্সার যে আইডি দিয়ে কাজ করেন, তাতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। পরে অন্য ক্লায়েন্টরা তাকে কাজ দিতে চাইবে না। এটা একেবারে সহজ হিসাব ও তথ্য। এর বাইরেও অনেক জটিলতা রয়েছে।’
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সম্মেলনকক্ষে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সাররা যে প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট করেন, তা থেকে যে আয় আসে, তার ওপর নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয়। সম্প্রতি তাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে এই প্রণোদনাটা একটু বাড়ানো যায় কি না, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমি নিজে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে কথা বলবো। তাদের নগদ প্রণোদনা যেন ৩ বা ৪ শতাংশ করা হয়, সে বিষয়ে জোর সুপারিশ করা হবে।’
তবে ফিল্যান্সাররা জানিয়েছেন, ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। ফলে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সাররা এখন কোনো প্রণোদনার সুবিধা পাননি।