মাত্র তিন বছর সংসদ সদস্য থাকাকালীন অন্তত শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সাবেক এমপি হাবিব হাসান। যদিও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা রিটার্নিং কার্যালয়ে তার দেয়া হলফনামায় তার নগদ টাকা ও ব্যাংক ব্যালান্স পূর্বের সম্পদের চেয়ে ১১ গুন বৃদ্ধি পায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন মারা যাওয়ার কারণে তিনি উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর তার শত কোটি টাকার সম্পদের তথ্য মানুষের মুখে মুখে।
৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর উত্তরা রবিবার রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জানতে পারে যে উত্তরার ৭ নং সেক্টরের ২৩ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়িতে হাবিব হাসান ও তার ছেলেসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা আত্মগোপন করে আছেন। শিক্ষার্থীরা ওই বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে। গতকাল সোমবার সকালে ওই বাড়িতে যৌথ বাহিনী ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৬৫ টি ১০০ ইউএস ডলারের নোটসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ৩ টি পুলিশ লেখা বুলেট প্রæফ জ্যাকেট, ১ টি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ গাড়ি ও ১ টি হ্যারিয়ার জিপ গাড়ি উদ্ধার করে। ওই বাড়িটি সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসানের ছেলে আবির হাসান তামিমের শ্বশুরবাড়ি। তবে যৌথবাহিনীর অভিযান চলাকালে তামিমের শ্বশুর বা তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। ওই বাড়ি থেকে যৌথবাহিনী শাহজাদা খান সাজ্জাদ, তৌজিদুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।
বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ৪ ও ৫ আগষ্ট উত্তরা রাজলক্ষী কমপ্লেক্সের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে হাবিব হাসানের ছেলে আবির হাসানসহ দুই জনকে শর্টগান নিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। তাদের হাতে আরো আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। এসব আগ্নেয়াস্ত্র হাবিব হাসান পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই বাড়িতে রেখে যেতে পারেন।
হাবিব হাসান ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার সময় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। খিলক্ষেত, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, বাউনিয়া, বিমানবন্দর এলাকা ও আশকোনা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডি এম শামীম, ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিক আহমেদ ওরফে সোনা শফি, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম যুবরাজ, আইসক্রীম মাহবুবসহ অন্তত ১০ জন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে হাবিব হাসান ছিলেন উত্তরা এলাকার দোর্দন্ড প্রতাপশালী রাজনৈতিক নেতা।
এক বছরের মধ্যে বাউনিয়া এলাকায় তার পৈত্রিক বাড়িটি দোতালার রাজপ্রাসাদ নির্মান করেন। বাউনিয়া এলাকার সরকারের খাস জমি দখল করে রিকশার গ্যারেজ, খাবার হোটেল ও নিম্নবিত্তদের টিনশেড ঘর নির্মান করে ভাড়া দেন।
উত্তরা রাজলক্ষী কমপ্লেক্সের পাশে নির্মান করেন আট তলা বিশিষ্ট একটি মার্কেট কাম কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স। তার বাবা আব্দুল লতিফের নামে মার্কেটটির নাম দেন লতিফ এম্পারিয়াম। উত্তরা এলাকার রূপায়ন সিটির নির্মান কাজে তার বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। উত্তরা রাজউক মডেল কলেজের বিপরীত পাশে একটি মার্কেট নির্মানের চাঁদাবাজিও তার নিয়ন্ত্রনে।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ের উত্তর প্রান্তের ল্যান্ডিং পজিশনের দিকে বাদলদী গ্রামের পাশে লেক রয়েছে। এই লেকের মালিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই লেকের মাছ উৎপাদন তিনি নিয়ন্ত্রন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালে ঢাকা-১৮ আসনে এমপি হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই মোহাম্মদ হাবিব হাসানের নগদ টাকা ও ব্যাংক ব্যালান্স বেড়েছে ১১ গুণ। দুটি থেকে ছয়টি প্লটের মালিক হয়েছেন তিনি। ২ টি গাড়ি থেকে ৬ টি গাড়ির মালিক। পল্লবীতে ১৫ শতাংশের ১ টি প্লট, উত্তরায় ২ টি বাড়ি ও ১ টি ছয় তলা বাড়িতে ২ ফ্ল্যাট রয়েছে।