৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

হাসিনা সরকারের ভিআইপি কারাবন্দীদের সাথে কোনো নিকটাত্মীয়ই দেখা করছেন না

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গণহত্যায় জড়িতসহ বিভিন্ন অপরাধে বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত ৬৬ জন ভিআইপি মর্যাদার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের আইজি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার, সম্প্রতি দায়িত্ব পালনকারী কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কারাগারে থাকা এই ব্যক্তিরা কেমন আছেন, কীভাবে কাটছে তাদের দিনকাল আর কী খাচ্ছেন তারা- এসব নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা কৌতূহল।

কারাগারে আছেন যারা
বুধবার দুপুর পর্যন্ত এ ধরনের বিশেষ বন্দির সংখ্যা ছিল ৬৬ জন। তাদের মধ্যে ডিভিশন পেয়েছেন ৩৭ জন। হাসপাতালে আছেন তিনজন। কারা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যেসব ডিভিশনপ্রাপ্ত বিশেষ বন্দি আছেন তারা হলেন- দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামছুল হক টুকু, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক সংসদ সদস্য আহম্মেদ হোসাইন, সাবেক রিয়াল অ্যাডমিরাল এম সোহাইল, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, হাজী মো. সেলিম, সাবেক নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি আবুল হোসেন মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক সংসদ-সদস্য শাহে আলম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, কুষ্টিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জজ, ডিআইজি মিজানুর রহমান, পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান।

কী খাচ্ছেন তারা?
সকালে রুটি-সবজির সঙ্গে জেলি পান। সাধারণ বন্দিদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা না থাকলেও ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের চা দেওয়া হয়। সাধারণ বন্দিরা মাছ/মাংস পান একবেলা। কিন্তু ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিরা দুই বেলা মাস/মাংস পান। কিন্তু পরিমাণ সবার জন্য সমান। সূত্র জানায়, ভিআইপি বন্দিরা কারাগারে কাজের লোকও পান। কাজের লোক একধরনের সেবক হিসাবে কাজ করেন। ওই সেবক ভিআইপি বন্দির কাপড় ধুয়ে দেন, খাবার সংগ্রহ করে দেন, প্লেট ধুয়ে দেন। এছাড়া আনুষঙ্গিক কাজ করে দেন।

যেভাবে সময় কাটছে তাদের
কারাগারে থাকা বিশেষ বন্দিরা কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন- জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই কেউ কেউ নামাজ পড়ছেন। কেউ দেরিতে ঘুম থেকে উঠছেন। কমবেশি সবাই নামাজ পড়ছেন। চা-নাশতা খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেন, গল্প-গুজব করেন, পত্রিকা পড়েন। কেউ কেউ কারা লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়েন। দুপুর ১২টার পর গোসলে যান। গোসল শেষে কেউ কোরআন তেলাওয়াত করেন, নামাজ পড়েন। বিকালে নির্ধারিত প্যালেসে হাঁটেন। সাধারণ বন্দি ও ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিরা থাকার জন্য একটি খাট পান। চেয়ার-টেবিল পান। কারা লাইব্রেরিতে সবার জন্য পত্রিকা পড়ার সুবিধা আছে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সাধারণ বন্দিরা নিজ খরচে রুমে নিয়ে পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের রুমে পত্রিকা পড়ার সুযোগ করে দেন। তারা টেলিভিশন দেখারও সুযোগ পান।

কারাসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিআইপি বন্দিরা কারাগারে বিশেষ সুবিধা দাবি করলেও তাদের তা দেওয়া হচ্ছে না। কারাবিধি অনুযায়ী তারা যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা, সেগুলোই তাদের দেওয়া হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী প্রতি ১৫ দিন পর নিকটাত্মীয়রা বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। নিয়ম অনুযায়ী নিকটাত্মীয় ছাড়া বন্দিদের সঙ্গে কারও দেখাসাক্ষাতের সুযোগ নেই। তবে বর্তমানে কারাবন্দি ভিআইপি বন্দিদের সঙ্গে কোনো নিকটাত্মীয়ই দেখা করছেন না। তবে ম্যানেজার টাইপের কেউ একজন এসে দেখা করছেন। তিনিই মামলার খোঁজখবর রাখছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, একজন বন্দি প্রতি ১০ দিন পর একদিন নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে কারাগারের ভেতর থেকে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ বন্দিদের ক্ষেত্রে এ সুযোগ এখনো কেউ পাননি।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

কলকাতায় বাংলাদেশের পতাকা অবমাননার ঘটনায় ঢাকার নিন্দা

ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয়

হাসিনার পতনের পর ইসকন কেন প্রতিবাদ-আন্দোলন করছে

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ইসকনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, একটা সংগঠন সম্প্রতি যা করছে, আমি তাদের নামও নিতে চাই না। দুনিয়ার বিভিন্ন

মিয়ানমার জান্তাপ্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) মিয়ানমারের সামরিক প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছে

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে ইন্ধন রয়েছে, চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে: সেনাবাহিনী

সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান বলেছেন, সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন ও চট্টগ্রামে আইনজীবী নিহতের ঘটনায় ইন্ধন রয়েছে। এসব ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত

Scroll to Top