২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরব হতে না পারায় সাকিবের দুঃখ প্রকাশ

আওয়ামী লীগ সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালে তরুণদের আইকন হয়ে থাকা ক্রিকেটার, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে একটু হলেও সহমর্মিতা আশা করেছিল ।

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা সাকিব আল হাসান সহমর্মিতা জানানো তো দূরে থাক, তখন টুঁ-শব্দটিও করেননি। এমনকি তখন কানাডায় ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। যে ছবি পোস্ট করেছিলেন তার স্ত্রী শিশির। কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে এ নিয়ে দর্শকদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতেও জড়াতে দেখা গেছে।

সম্প্রতি ভারতে কানপুর টেস্টের আগে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। জানিয়ে দেন, অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চান। এ নিয়ে বিসিবির কাছ থেকে এক ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও চেয়েছিলেন। যদিও বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়ে দেন, নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই।

অন্যদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছিলেন, ক্রিকেটার সাকিবের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত তারা। তবে রাজনীতিবিদ সাকিবের বিষয়ে ভিন্নতা আছে। এ ক্ষেত্রে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সাকিবকে আহ্বান জানান, নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য। শেষে দুবাইতে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখতে গিয় আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, তারা সাকিবকে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে সাকিব আল হাসান ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় চুপ থাকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন। যেখানে নিজের অবস্থানও তুলে ধরেন তিনি। সেখানে তার সংসদ সদস্য হওয়ার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন সাকিব। একই সঙ্গে নিজেকে রাজনীতিবিদ নয়, একজন ক্রিকেটার হিসেবেই তুলে ধরতে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন।

সাকিব আল হাসানের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো…

‘আসসালামু আলাইকুম, আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালবাসা আমাকে আজকের এই সাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করেছে।

শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজন হারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোন কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।
এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম।

আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোন দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে। যাইহোক দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটাকেই ধারণ করেছি।

এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন -আপনারা । আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের সাকিব আল হাসান বানিয়েছে। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি তখন আমার সাথে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচেপড়া ভিড় -আমাকে শক্তি যুগিয়েছে।

আমি জিতলে, আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে, হেরে গেছেন আপনারা সবাই! আপনারা জানেন, খুব শীঘ্রই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা।

এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদেরকে পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমার ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে।

আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি –এই বিদায় বেলায় আপনারা সবাই আমার সাথে থাকবেন। সবাই সাথে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক –আমি নই, আপনারা!’

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে না যেতে অন্য দলগুলোকে লোভনীয় প্রস্তাব ভারতের

পাকিস্তান ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক হওয়া সত্বেও ভারতের সাফ কথা, তারা পাকিস্তান যাবে না। শুধু নিজেরাই নয়, অন্য দলগুলোও যাতে পাকিস্তানে খেলতে না যায়

হাথুরুসিংহের সঙ্গে অনাকাঙ্খিত ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন নাসুম

গত বছর ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে সাবেক হেড কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে স্পিনার নাসুম আহমেদের। অভিযোগ ওঠে, কোচ সেসময় নাসুমকে শারীরিকভাবে

প্যারাগুয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে মেসির আর্জেন্টিনা

প্যারাগুয়ের মাঠে ২-১ গোলে হেরেছে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানে থাকা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা । এই প্যারাগুয়ের বিপক্ষে শক্তিশালী একাদশ নিয়েই মাঠে নেমেছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে

দাবাড়ু জিয়ার মৃত্যুর পর পরিবারের সংকটে তামিমের অর্থসহায়তা

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা দাবাড়ু গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান বেশ কিছু দিন আগে দাবা খেলতে খেলতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। জিয়াকে হারিয়ে তার একমাত্র সন্তান তাহসিন ও

Scroll to Top