শেখ হাসিনার তিন মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কমবেশি ১৮ হাজার ব্যক্তির নামে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট জারি করেছে। তাঁদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে আছেন হাসিনা সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রও। এমন পরিস্থিতিতে হাসিনা সরকারের আমলে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদের মধ্যে একজন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। সূত্র জানিয়েছে, তার বিষয়ে আপত্তি দিলেও অন্য সদস্যরা আমলে নেননি। উনি ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে ইতিবাচক মতামত দেওয়া হয়।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বা তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লেখাতে আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও তাঁর ভাই জাঁ-নেসার ওসমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, বরিশালের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, গাইবান্ধা-৪ আসনের সাবেক এমপি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১১ আসনের সাবেক এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেসসচিব ইহসানুল করিম, সাবেক সচিব খাজা মিয়ার বাবা প্রয়াত সোহরাব হোসেন, জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) একজন সাবেক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের ২৩ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়ন ভারতীয় সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
ওই ব্যাটালিয়নে ফারুক খান ছিলেন। নিজে বাঙালি অফিসার পরিচয় দিয়ে কোনো মতে জানে রক্ষা পান। ভারতীয় সেনারা ১৫ ডিসেম্বর তাকে দিল্লি পাঠান। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে ফারুককে কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশনার হোসেন আলীর দপ্তরে পাঠানো হয়।
এরপর ১৪ জানুয়ারি বেনাপোল বন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। তাহলে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করলেন কখন?’ শুধু ফারুক খানই নন, এমন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের আমলের অনেক মন্ত্রী ও এমপি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংস্কার করা হবে।
আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে মোট ১৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিষয়টি তদন্ত করা হবে।’