২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সৌদি যাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে যুবকের মৃত্যু অর্থাভাবে লাশ আনতে পারছে না পরিবার

মাইনুল ইসলাম রাজু, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ

বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের মো. বায়েজিদ হাওলাদার (৪০) নামে এক যুবক সৌদি আরব যাওয়ার তিন দিনের মাথায় মৃত্যু বরন করেছে। যাওয়ার ৩দিনের মাথায় মৃত্যু বরন করায় অর্থাভাবে তার পরিবার এখন লাশ দেশে আনতে পারছে না। মৃত্যু বায়েজিদ বড়বগী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের মো. ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে । বায়েজিদের মৃত্যু খবরটি নিশ্চিত করেছেন সৌদি প্রবাসী এবং পাশের রুমের বাসিন্দা কবির নামে একজন। লাশটি বর্তমানে রিয়াদের একটি হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, পরিবারের অর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে ঋণ করে কাজের সন্ধানে গত ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়েন বায়েজিদ। সৌদি পৌছার ৩ দিনের মাথায় ২০ অক্টোবর রবিবার রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সোমবার সকালে বায়েজিদের পাশের রুমের বাসিন্দা পটুয়াখালীর মহিপুরের প্রবাসী কবির নামে একজন বায়েজিদের মৃত্যুর সংবাদ পরিবারকে জানায়। বায়েজিদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পবিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। একমাত্র উপার্যন ক্ষম পরিবারে প্রধান বায়েজিদের মৃত্যুর খবর শোনার পর তারি পরিবারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে। বায়েজিদের পরিবারে বৃদ্ধ মা রাহিমা বেগম স্ত্রী শিমু বেগম আর ৮ বছরের ফেরদৌস নামে এক সন্তান রয়েছে। ছোট ভাই ওবায়দুল সে মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা ইউনুছ হাওলাদার প্রায় ১০ বছর পূর্বে মারা যান। মা রাহিমা বেগম বৃদ্ধ শয্যাশায়ী। বায়েজিদের বসত বাড়ি ছাড়া জমি বলতে কিছু নেই। দিনমজুরীর কাজ কাজ করে সংসার চালাতেন সে। পরিবারের সুখের কথা ভেবে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে চড়াসুদ আর ধার দেনা করে এবং আরডিএফ নামের একটি এনজিও থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ করে ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে সৌদি যান। সৌদি গিয়ে ৩ দিনের মাথায় বায়েজিদের মৃতুতে তার পরিবারটি এখন অথৈই সাগরে ভাসছে। স্ত্রী শিমু বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, স্বামীই ছিল মোর ভরসা। মোগো সুখের লইগ্য সৌদি যাইয়া মইর‍্যা গেছে। এহন মোগো কি অইবে। কি করে চলমু। কি খামু। কি দিয়া মানসের দেনা পরিশোধ করমু। এহন লাশটাই বা কি করে দেশে আনমু। কথাগুলো বলছিলেন আর বার বার চোখের পানি মুছছিলেন আর বলছিলেন মোর স্বামীরে আমনেরা দেশে আইনা দেন। মোর স্বামীর মুখটা একটু দেখতে চাই।
বায়েজিদের স্ত্রী সিমু বেগম আরো বলেন, একদিকে স্বামীর লাশ আনতে অর্থের প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবারের ঋণের বোঝা এবং ১টি সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। সরকার এবং সমাজের বিত্তমান স্বহৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে স্বামীর লাশটি বাড়িতে আনা সম্ভব।

অসুস্থ শরীর নিয়ে বায়েজিদের বৃদ্ধা মা রাহিমা বেগম শুয়ে আছেন বিছানায়। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউ মাই করে কেদে ওঠেন আর বলেন, বাবা মোরে তো দেহার আর কেউ রইলো না। অল্লায় মোরে না নিয়া কিরলইগ্যা মোর পোলাডারে নেলো। মুই বিছানায় মৃত্যুর অবস্থায় আছি এহন কে মোরে ওসুধ কিন্যা দেবে। কেডায় আমার ভাত খাওয়াইবে। ও অল্লা মোর পোলাডার এরম অইলো কে। তিনি আরো বলেন, মোর পোলাডার লাশটা দ্যাশে আইন্যা দেন। মুই শ্যাষ বারের মত মোর পোলাডার মুখ দ্যাখতে চাই। মুই মা হিসেবে সরকারের কাছে দাবী জানাই মোর পোলার লাশটা যেন সরকার দ্যাশে আনার ব্যবস্থা করে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, বায়জিদ নামে এক প্রবাসীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সৌদি আরব থেকে বায়েজিদের লাশ আনার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এজন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করে জমা দেওয়ার জন্য বলেছি। এ ছাড়া তাদের পরিবারকে অর্থিক ভাবেও সহযোগিতা করা হবে।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

শান্তিনগর থেকে অহিংস গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক মাহবুবুল আলম গ্রেফতার

রাজধানীর শাহবাগে ‘বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে, এজন্য শাহবাগে বিশাল সমাবেশে জড়ো হতে হবে’-এমন কথা বলে লক্ষাধিক

নিজ বাড়িতে ফিরতে চাই: তুরিন আফরোজের মা

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে বাড়ি দখল ও সন্ত্রাসী ভাড়া করে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে তার মা শামসুন্নাহার তসলিম নিজের নাগরিক অধিকার এবং বাড়ি ফিরে পাওয়ার

দুই কলেজের সংঘর্ষে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ রণক্ষেত্র

কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে । এ ঘটনার পর মোল্লা

রুমায় কেএনএফের আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযান

সেনাবাহিনী রোববার (২৪ নভেম্বর) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবানের রুমার কুত্তাঝিরি দুর্গম এলাকায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে। একইদিন রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর

Scroll to Top