নতুন দুই উপদেষ্টা আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অতীত রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও কর্মকান্ড ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তাদেরকে বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে অপসারণের দাবিতে গত দুই দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। শেখ বশির উদ্দীন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দীনের ভাই ও একটি মামলার আসামি এমন তথ্যও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। তার নাম সম্বলিত মামলার কাগজের ছবি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও তার অভিনেত্রী স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা একে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তারা অনেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে অভিনেত্রী তিশার হাস্যোজ্জ্বল ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তৈরি করা ফিল্মে শেখ হাসিনার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন তিশা।
এদিকে ফ্যাসিবাদের দোসর নন বলে দাবি করেছেন নবনিযুক্ত দুই উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফারুকী দাবি করেন, তিনি ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন ফেসবুক দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোহান শাহ নামের (৩০) এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামের এক ব্যক্তির নামটি আংশিকভাবে মিলে যায় অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি সেখ বশিরের বাবার নামের সঙ্গে আসামি তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’র বাবার নামের আংশিক মিল রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নাম দিয়ে সেখ বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে কিনা।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন তিনি বলেন, নামের আংশিক সংগতি ও অসংগতি থাকলেও তিনি নিশ্চিত নন, মামলাটি তার নামে হয়েছে কিনা। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া ও সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, তারা খতিয়ে দেখছেন তারা মামলার বাদী নিহত সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তার ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। তিনি তার ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার চান।
দুই উপদেষ্টার অপসারণ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ ভাস্কর্যের সামনে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, রংপুর ও যশোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। গতকাল রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাস্সিার পতন হয়েছে। তবে এখনো তাদের দোসরদের নানাভাবে পনর্বাসন করা হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে ‘যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি’ বলছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ সমন্বয়ক-শিক্ষার্থী ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্টিভিস্টরা।
এমনকি প্রতিবাদস্বরূপ আবারও নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি লাল করেছেন তারা। এ ঘটনার পর সর্বপ্রথম আবারো ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আহ্বান জানান সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। । এরপরই শুরু হয় প্রোফাইল লাল করার হিড়িক। এরপর নিজের ফেত্বক প্রোফাইলের ছবি লাল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদল্লাহ সোমবার রাত ১০টা ৫২ মিনিটে হাসনাত আব্দল্লাহ লিখেন, ‘সাঈদ ওয়াসিম মঞ্জু, শেষ হয়নি যদ্ধ। ১৩৪ শে জুলাই, ২০২৪।’ এর আগে রবিবার ‘খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে’- বলে অভিযোগ করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
গতকাল মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে হাসনাত আদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনীতিবিদেরা হাত মেলাচ্ছে, আরা আর বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়ি এগিয়ে আসছে’ এর আগে আরেকটি পোষ্টে হাসনাত লিখেন ‘বশিল্প-ফারুকীকে উপদেষ্টা করার প্রতিবাদ সভা থেকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা চরম ফাইজলামি এগুলা ভন্ডামি। আপনেরা হাসিনা হয়ে ওঠার চেষ্টা কইরেন না। হাসিনারেই থোরাই কেয়ার করছি, উৎখাত করছি। আপনেরা কোন হন্য হইছেন?