বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার পতনের পর প্রায় সাড়ে ৫০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে । এসব অ্যাকাউন্টে জমা আছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ তালিকায় আর্থিক খাতের অনিয়মে আলোচিত এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ শীর্ষে রয়েছেন।
এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সাংবাদিক, পুলিশসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে পুলিশ, দুদকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় অনেকের অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়েছে বিএফআইইউ।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ৬টি ব্যবসায়ী গ্রুপের অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দেশে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। এর বাইরে ১১০টি ঘটনায় ৩৪৩ জন ব্যক্তি ও ২০০ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ বা তলব করেছে বিএফআইইউ। অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যসহ ২২৫টি তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি এবং দুদকে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ২০ ব্যবসায়ী গ্রুপের অর্থ পাচার, ঋণ জালিয়াতি, সরকারি তহবিল তছরুপসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে বিএফআইইউ। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এস আলম গ্রুপ এবং সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পরিবারের তদন্ত রিপোর্ট পুলিশের অপরাধ সিআইডি এবং দুদকে পাঠানো হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের তদন্ত রিপোর্ট পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সামিট, বসুন্ধরা, ওরিয়ন, সিকদার, নাসা, নাবিলসহ আরও ১৭টি ব্যবসায়ী গ্রুপের বিষয়ে তদন্ত চলছে। পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিগগিরই এসব রিপোর্ট সিআইডি ও দুদকে পাঠানো হবে।
অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ও তার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ, তার ৬ ভাইসহ পরিবারের ১৩ জন এবং তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. আকিজ উদ্দীনের। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ. রহমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের নাম রয়েছে এ তালিকায়।
সামিট গ্রুপের মোহাম্মদ আজিজ খান, মুহম্মদ ফারুক খানসহ তাদের পরিবারের ১১ জন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের ৮ জন, ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম পরিবারের ৬ জন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও তার স্ত্রী, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের পরিবারের ৬ জন, নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী, প্রয়াত জয়নুল হক সিকদার পরিবারে ১৪ জন এবং চৌধুরী নাফিজ সারাফাত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা সাহিদ এবং ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরী রয়েছেন তালিকায়।
তালিকায় আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), সিআরআই-ইয়ং বাংলা প্রজেক্ট এবং সাবেক মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নাম রয়েছে। আরও আছেন শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ পরিবারের ৭ জন, চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল পরিবারের ৯ জন এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিম পরিবারের ৫ জন এবং শেখ হেলাল উদ্দিন, তার স্ত্রী রূপা চৌধুরী ও ছেলে শেখ তন্ময়।
এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক পরিবারের ৪ জন এবং এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (বরখাস্তকৃত) জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।